জেল থেকে বেরিয়ে আবারও বেপরোয়া ‘ডিবি মনিয়া’
স্টাফ রিপোর্টার
পর্যটন শহর কক্সবাজারে নতুন সন্ত্রাসী বাহিনী ‘বিজয় গ্রুপ’ নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বহু মামলার আসামী, কথিত ‘মনিয়া বাহিনী’র প্রধান শাহাদত হোসেন মনিয়া। হত্যা, অপহরণ, মানব পাচার, চাঁদাবাজী, জমি দখল, ডাকাতি ও মাদকসহ একাধিক মামলার আসামী মনিয়া রাজত্ব করছে হোটেল মোটেল জোনে। কলাতলীতে তার ৩৬ জনের একটি ‘বিজয় গ্রুপ’ নামে বাহিনীও রয়েছে। যে বাহিনীতে রয়েছে একাধিক মামলার অনেক সক্রিয় আসামী। সাগরতীরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত এই মনিয়া অস্ত্র ও ইয়াবাসহ বহুবার গ্রেপ্তারও হয়েছিল। কিন্তু সহজে জামিনে বের হয়ে তার অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে নিবিঘ্নে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খাতায় সন্ত্রাসী মনিয়া পর্যটকদের কাছেও আতঙ্ক। কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার আবু শামার ছেলে এই মনিয়াকে অনেকেই ‘ডিবি মনিয়া’ হিসেবেও চেনেন।
অভিযোগ আছে- গত ১৪ মে বিকালে কলাতলী বীচ ভিউ হোটেলের সামনে থেকে ফারুক নামে এক টমটম চালককে অপহরণ করে মনিয়া বাহিনী। অপহরণ করে পাশের ৫১ একরের পাহাড় নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণের দাবীতে বেড়দক মারধরও করা হয় ফারুককে। পরে পুলিশ ফারুককে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করে ভিকটিমের স্ত্রী।
দেড় বছর আগে কলাতলী সি ব্লকের ৪৭ নম্বর প্লটের ঝুপড়ি ঘরে থাকা আব্দুল মালেক নামে একজনকে জমি দখলের জন্য অমানবিক নির্যাতন চালায় মনিয়া। পুলিশ খবর পেয়ে মনিয়ার টর্চার সেল থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় মালেককে উদ্ধার করে। কয়েক বছর আগে কলাতলীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মিঠুনকে ছুরিকাঘাত করে মনিয়া। ইয়াবা বিক্রির বিষয়ে কয়েক বছর আগে কটেজ জোনে এক পর্যটককে হত্যা করেছিল মনিয়া ও তার বাহিনীর লোকজন। কলাতলীতে গাঁজা বিক্রির ভাগ না পেয়ে মোনাফ নামে একব্যক্তিকেও মনিয়া বেধড়ক মারধর করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
অভিযোগ উঠেছে, কলাতলীর চন্দ্রিমা এলাকায় বিশাল জমি দখল করে বিক্রি করে দেন তিনি। কলাতলী টিএন্ডটি এলাকায় সরকারি জমি দখল করে মতি নামে একজনকে বিক্রি করেন মনিয়া। এখন মতির কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদাও নেন তিনি। কলাতলী কেন্দ্রিক মনিয়া বাহিনীর এই বিজয় গ্রুপ থেকে দৈনিক ও মাসিক চাঁদা পান কলাতলী এলাকার কয়েকজন যুবক এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা কর্মী।
সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনিয়া বাহিনীর প্রধান মনিয়ার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে মাঠে নামেন। মনিয়া বাহিনীকে আশ্রয়দাতা হিসেবে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতাসহ অনেকের নাম উঠে এসেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, তার বাহিনীতে রিকশা চালকের ছন্দবেশে ‘বিজয় গ্রুপ’ এ রয়েছে- ইয়াবা মামলার আসামী হানিফ, মারামারি মামলার আসামী রাজু, হত্যা ও ছিনতাই মামলার আসামী সিরাজ, ছিনতাই মামলার আসামী কলিম, জমি দখলসহ একাধিক মামলার আসামী মোতাহের, নারী নির্যাতন মামলার আসামী কামাল (বার্মাইয়া কামাল নামে পরিচিত) ও ঢাকা থেকে পলাতক আসামী মামুন। পর্যটন এলাকায় রিকশা চালকের ছন্দবেশে তারা নিয়মিত মাদক ও নারী পাচারে জড়িত রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। রিকশা চালকের আড়ালে হোটেল-মোটেল জোনে নিয়মিত মাদক সরবরাহ দিচ্ছে কলিম, হানিফ ও মামুন।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, এসব মাদক জোগান দেন মনিয়া নিজেই। নিজের টর্চার সেলের একটি রুমে নিয়মিত বসে মাদক ও জুয়ার আড্ডা। বসে ইয়াবা সেবনের আসরও। মাদক ছাড়াও নারী পাচারের অংশ নেন হানিফ ও কলিম। তারা হোটেল মোটেল জোনে মাদক ও নারী পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত।
রিকশা ও টমটম চালকের ছদ্মবেশ ছাড়াও তার রয়েছে কয়েকজন সক্রিয় সদস্য। যারা ছিনতাই ও অপহরণ কাজে মনিয়ার সাথে সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছে অনেকেই। এরমধ্যে রয়েছে- পতিতা ব্যবসায়ী জাফর, মোরশেদ, মতিন, সিরাজ, রহিম উল্লাহ, জমির, আরাফাত, ফয়সাল ও আয়ুব।
এদিকে সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯ জুন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মনিয়া বাহিনীর প্রধান শাহাদত হোসেন মনিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি পুলিশ। এ সময় তার কাছে পাওয়া যায় ৩ হাজার ইয়াবা, একটি দেশীয় অস্ত্র ও ২ রাউন্ড কার্তুজ। এসব উদ্ধারের ঘটনায় দীর্ঘদিন জেল খাটেন মনিয়া। জেল থেকে বের হয়ে ফের অপরাধ কর্মকান্ড শুরু করে। এরপর আরেকটি মামলায় কারগারে যান তিনি। সর্বশেষ প্রাড দুই মাস আগে কারাগার থেকে বের হন তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন- যেসব দাগি আসামী জেল থেকে বের হয় তাদের সবসময় নজরদারীতে রাখা হয়। মনিয়াকেও নজরদারীতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাকে কয়েকবার গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। যদি সে আবারো অপরাধে জড়িত হয়ে থাকে এবং পর্যটক হয়রাণির বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে